মোঃ আল-আমিন: শ্রীমঙ্গলে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করতে ১শ’ ২৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া। জমি ক্রয়ের সব ধরনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রকৃত মালিকের কাছে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৯ তারিখ স্থানীয় রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলও সম্পাদন করেন। উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের এমআর খান চা বাগান সংলগ্ন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের রাস্তার পাশে অবস্থিত ক্রয়কৃত ১শ’ ২৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৬৪ নং দাগে ৭৬ শতক ও ৩৯ নং দাগে ১০ শতক জমি দাবি করে বসেন পার্শ্ববর্তী জমির মালিক ও শহরের ‘নিউ মার্কেট’ এর সত্বাধীকারী আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল। অভিযোগ রয়েছে- ক্রেতা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী হওয়ায় আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল গায়ের জোরে ৮৬ শতাংশ জমি জোর করে দখলে নেয়। জমির মালিক চট্টগ্রামের পাহারতলী উপজেলার জামদু মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া জানান- ‘আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল দীর্ঘদিন যাবত গায়ের জোরে আমার জমি দখলে রেখেছে। এনিয়ে প্রতিকারের আশায় জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিলেও কোন সমাধান মেলেনি’। তিনি বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে সেনা ক্যাম্প স্থাপন হলে গত ১৩ আগষ্ট শ্রীমঙ্গল সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ দায়ের করি। সেনা ক্যাম্প কর্তৃক অভিযোগটি আমলে নিয়ে পরদিন ১৪ আগষ্ট উভয় পক্ষকে সেনা ক্যাম্পে ডেকে পাঠান। এদিন উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সার্ভেয়ারকে দুই পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখার দায়িত্ব দেন। এসময় সেনা কর্মকর্তা তৎকালিন শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় এর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলেন। পরে কাগজপত্র যাচাই ও ভানু লাল রায় বক্তব্য শুনে সেনা কর্মকর্তাকে জানান, জমির দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য আবিদুর রহমান সোহেল কে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি রাজী হননি’। এরপর সেনাবাহিনী থেকে- দখলদার আবিদুর রহমান সোহেল এসি ল্যান্ড অফিসে ডেকে পাঠানো হলেও তিনি এসি ল্যান্ড অফিসে হাজির হন ১৫ দিন পর’। সেখানে আমার অনুকুলে আমার জমি ছেড়ে দেয়ার কথা জানলেও তিনি অদৃশ্য শক্তির জোরে সরকারী নির্দেশনার তোয়াক্বা করেননি’।
জানা যায়, জমির মালিক সেলিম মিয়া ১ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল থানায় ও মৌলভীবাজার সেনা ক্যাম্পে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। এ খবর জানতে পেরে আবিদুর রহমান সোহেল ক্ষিপ্ত হয়ে জমির মালিক সেলিম মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যকে নানা ভাবে হয়রানী করছে। এছাড়া আবিদুর রহমান চৌধুরী মিথ্যা অভিযোগ করে আমার বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর একই দিনে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, মামলার প্রেক্ষিতে আদালত থেকে সরেজমিন তদন্ত করে ৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার উপ-পরিদর্শক মো. কামরুল হোসাইন ভুমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর আবেদন করেন। যার স্মারক নং- ০৫.৬০.৫৮০০.০১৩.২০২২-৩৮৭, তারিখ ৫.০৯.২০২৪। অভিযোগ রয়েছে, ভুমি অফিসের ‘মালিকানা যাচাই প্রতিবেদন’ প্রেরনের পুর্বেই গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে একটি মনগড়া প্রতিবেদন আদলতে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনের কোথাও ভুমির মালিকানা যাচাই এ জরিপ করার কথা বলা হয়নি।
সেলিম মিয়া বলেন, ‘পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমাকে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে জায়গা সার্ভে করার নিমিত্তে উপস্থিত থাকতে বলেন। কিন্তু এদিন সকালে ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমাকে জানান, আমাদের আসতে হবে না, তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা ইতিমধ্যেই আদালতে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিলেও আমাদের অফিসের কোন মালিকানা যাচাই’ রিপোর্ট নেয়নি বা আমাদের অবগত করেননি।
ভুমি অফিসের মালিকানা যাচাই রিপোর্ট ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল হোসাইন বলেন, ‘ভুমি অফিসকে অবগত করতে হবে বা এসিল্যান্ড অফিসের রিপোর্ট নিতেই হবে-আদালতের এমন কোন নির্দেশনা নেই’।
উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।