স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সমস্যা এক নতুন নয়। এই অবৈধ কার্যক্রম অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে এবং এখনো থেমে নেই। কেবল পরিবর্তন হয়েছে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার ব্যক্তিদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা এক সময় এই অবৈধ বালু উত্তোলনের পেছনে ছিল, আর এখন নতুন গোষ্ঠী এর দায়িত্ব নিয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও এই কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। কৃষিজমি ধ্বংস এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। প্রভাবশালী চক্রের দৌরাত্ম্যে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পায় না।
উপজেলার ভুনবীর, মির্জাপুর ও সিন্দুরখান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। জানা যায় ভুনবীর, মির্জাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় সিলিকা বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। এতে ফসলি জমি ধ্বংস হচ্ছে, এবং মাটির নিচের পানি স্তর নেমে যাচ্ছে। সিন্দুরখান ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বালু উত্তোলনের ফলে তেল–গ্যাস পাইপলাইনের জাতীয় গ্রিড হুমকির মুখে পড়েছে। ভূমিকম্প হলে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে উত্তোলিত এসব বালু পরিবহনে দিনরাত প্রচুর ট্রাক চলাচল করে। এ কাজে সরকারের কোনো অনুমতি বা লিজ নেই, ফলে রাজস্ব আয়ও হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানায়, বালু উত্তোলনে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরা বেশ প্রভাবশালী। অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা জড়িত। স্থানীয়রা অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। প্রশাসনের অভিযান সাময়িক হলেও পরে আবার সব আগের মতো শুরু হয়ে যায়। এতে স্থানীয় জনগণ মনে করছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব কাজ চলছে।
বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জমির নিচের দিকে গর্ত হওয়ায় ফসল ঠিকমতো হচ্ছে না। এসব কারণে এলাকার কয়েকশ পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় এক সচেতন নাগরিক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। এ ছাড়া, উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে, এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জানা যায় অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক হামলার শিকার হন।
স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রশাসনের অভিযান কার্যকর হওয়া এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োগ প্রয়োজন। সরকার যদি এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে ফসলি জমি ও পরিবেশের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে।