জালাল আহমেদ দুলাল, স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশের সার্বিক প্রচেষ্টায় জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতির দিকে। জনগণের সম্পৃক্ততা এবং পুলিশের কার্যকর ভূমিকা মিলিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
তার যোগদানকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা দেখা যাচ্ছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
মাদক, ইভটিজিং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি দমনের বিষয়ে তিনি বলেন, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা এই জেলার প্রতিটি কোণে তল্লাশি চালিয়ে অপরাধীদের খুঁজে বের করবো।” মৌলভীবাজারে চা বাগানকে কেন্দ্র করে মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসার প্রবণতা আছে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। মাদক নিমূলে আমরা সবসময় স্বোচ্ছার এবং মাদকের বিষয়ে কোন পুলিশ কর্মকর্তা ও কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিও যদি জড়িত থাকেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং মৌলভীবাজার জেলায় কেউ যদি চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকে সে যেই হোক আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ইতোমধ্যে আমরা ঘোষণাও দিয়েছি। সবাইকে আমি আহবান জানিয়েছি চাঁদাবাজির কোন ঘটনা থাকলে আমাকে জানাবেন। ইভটিজিংয়ের ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে আমরা বিভিন্ন কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালু করবো। জনগণের মতামত ও সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গত ৫ আগষ্ঠের পরে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতির কারনে সড়কে গাড়ি বেপরোয়াভাবে চলছে যারকারনে যানজট সৃষ্টির কারনে জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ট্রাফিকের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রথমে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জড়িমানা আটক এগুলোর দিকে যাচ্ছিনা। আমরা জনগণকে ট্রাফিক বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শহরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে মাইকিং করেছি এবং আমাদের ট্রাফিক পুলিশ নিরবিচ্ছিন্নভাবে মোটরসবাইক নিয়ে, থানার গাড়ি নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। এবং দূর্ঘটনা বিষয়ক সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান করছে।
মৌলভীবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, মৌলভীবাজার একটি পর্যটন নগরী। বিশেষ করে আমরা মৌলভীবাজারকে চিনি চা শিল্পের সূতিকাগার এটা থেকে আমাদের পরিচিতি। চা শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটন নগরী। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে চায়ের বাগান দেখতে আসে। চা কে কেন্দ্র করেই এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে। ইতোমধ্যে আমরা পর্যটন নগরী হিসেবে মৌলভীবাজারের বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল এলাকায় পুলিশের একাধিক নিরাপত্তা টহল গাড়ি এবং আমাদের স্পেশাল টিমও পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে।
চা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে চা বাগানের শ্রমিকদের কিছু অষন্তোষ্ট লক্ষ্য করেছি সেগুলোকে যেন প্রাথমিক পর্যায়ে সেটা নিমূল করা যায় আমরা ৯২টি চা বাগানের ম্যানাজারদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে ইতোমধ্যে আমরা সমাধানে নিয়ে আসতে পেরেছি।
মৌলভীবাজারে একটি অন্যতম অপরাদ হচ্ছে গরু চুরি। বিশেষ করে এটি কুলাউড়া থানা এলাকায় হয়ে থাকে। যেটি আগে থেকে ছিলো এখনো হয়তো আছে। গরু চুরি দমনের জন্য আমরা স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন করেছি। থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই অপরাদ দমণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। এবং তালিকাভুক্ত যেসব চুর আছে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্ঠায় আছি। এবং পাশাপাশি সিএনজি চুরিরও প্রবণতা আছে আমরা ইতোমধ্যে সিএনজি চুর সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছি এবং এটা নিমূলের জন্য চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।
৫ আগষ্টের দিন, এর আগের ও পরবর্তীতে পুলিশের ভুমিকার কারনে কিছু ব্যাকফুটে গিয়েছিলো সে জায়গা থেকে মৌলভীবাজারে পুলিশ কিন্তু এখন পুরোপুরি দৈনন্দিন কাজে মনোনিবেশ করছে। ইতোমধ্যে আমরা ওয়ারেন্ট তামিল করতেছি। নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার করতেছি। এবং ৫ই আগষ্ঠের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছি উক্ত মামলায় আমরা একাধিক আসামী গ্রেফতার করেছি।
মৌলভীবাজারের সীমান্ত দিয়ে অন্য দেশে পলায়ন করার চেষ্ঠা করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। এবং ইতোমধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আওয়ামীলীগ নেতা পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলো তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি ঢাকা মুগদা থানার আসামী ছিলেন।
আসন্ন দূর্গা পুজার নিরাপত্তা বিষয়ে বলেন, পূজার সময় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিত করতে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে কঠোর নজরদারি থাকবে।
“জেলার সব পূজামণ্ডপে আমাদের পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মোবাইল টিমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হবে।” কেউ যদি কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরীরর চেষ্টা করে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, “দুর্গাপূজার সময় জনগণের অংশগ্রহণ ও সমন্বিত প্রচেষ্টাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পূজা উদযাপন যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তা নিশ্চিত করতে সকল ধর্মের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর তিনি মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। নবাগত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে মৌলভীবাজারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তার ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে জেলার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।