নিউজ ডেস্ক: একদিন বিরতির পর আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। টানা ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্কুল-মাদ্রাসার আঙ্গিনা তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। আবার কিছু-কিছু বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে পানি প্রবেশ করায় অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে পাঠদান। ক্রমশ: বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা নিতে পারছে না। আবার বন্যার কারণে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম প্রান্তিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে।
এদিকে টানা বর্ষণে উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হলেও শনিবার রাত থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে দেখা গিয়েছিল। এতে মানুষের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছিল। তবে তখনো সুরমা চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে। রবিবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আবারো সুরমা, চেলা ও পিয়ান নদীর পানি ক্রমশ: বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টেমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরসভা সহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় বসবাসরত মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে বন্যা আতাংক। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ধনীটিলা-ছনবাড়ী বাজার সড়র, ইছামতি ছনবাড়ীবাজার সড়ক তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। ইউনিয়নের নোয়কুট, রহমতপুর, বনগাঁও, দারোগাখালী, বৈশাকান্দি, ছনবাড়ী, ইছামতি, লুবিয়া, বাগানবাড়ি, রাসনগর, রতনপুর সহ নোয়ারাই, ছাতক সদর, কালারুকা, উত্তর খুরমা, চরমহল্লা, জাউয়া, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ, দক্ষিন খুরমা, ভাতগাঁও, দোলারবাজার ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আউশ-আমন ধানের ]বীজতলা ও শাক-সবজির বাগান তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। তবে কোথায় কোন বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলা আশ্রয় কেন্দ্র সহ আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি দেখে সাধারন মানুষও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। শুকনো খাবার সহ ব্যবহারিক অপরিহার্য দ্রব্যাদি সংগ্রহে রাখার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে সাধারন মানুষের মধ্যে। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত কোন পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে দেখা যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা মুন্না জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত সহ প্রাথমিক সব ধরনের প্রস্তুতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ আশ্রিত হয়নি। কোন ধরনের গুজবে আতংকিত না হওয়ার জন্য তিনি উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহবান জানান। বন্যা মোকাবেলায় সকলের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।