নিউজ ডেস্ক: জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৪ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজপালনের সুযোগ পাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। ইতোমধ্যে ২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সময় খুব বেশি নেই, অল্প সময়ের মধ্যেই ২০২৫ সালে হজপালনেচ্ছুকদের হজের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সৌদি আরবে ভাষার ভিন্নতা, আবহাওয়া ও নানা কারণে অনেক হজযাত্রী সমস্যায় পড়েন। কয়েকবার হজপালন করেছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে অনেক সমস্যা দূর করা যায়। তাই পাঠকের সুবিধার্থে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো-
করণীয়
প্রথমে হজের নিবন্ধনের কাজ শেষ করা। সরকারি মাধ্যমে না বেসরকারি মাধ্যমে হজে যাবেন, সেটা নির্ধারণ করা। প্যাকেজের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া। পাসপোর্ট করা না থাকলে এখনই জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল রেখে পাসপোর্ট করা। এবার ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরা হজে যেতে পারবেন। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে। সম্ভব হলে নিজের পাসপোর্ট নিজে করান। কাউকে দিয়ে করালেও আপনার নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে ঠিক আছে কি না, যাচাই করে নিন।
তবে ক্যান্সার, অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, সংক্রামক যক্ষা, ডিমেনশিয়া প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী নারী ও চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে হজের নিবন্ধন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
লেনদেনে সতর্কতা
হজ প্যাকেজের পুরো অর্থ শুধু সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সরাসরি এজেন্সিতে জমা দিয়ে হজযাত্রীদের টাকা পরিশোধের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না। হজযাত্রী নারী ও শিশু থাকলে মাহরামসহ একসঙ্গে টাকা জমা দিতে হবে। এছাড়া কোরবানির খরচ হিসেবে প্রত্যেক হজযাত্রীকে (সাড়ে সাতশ’ রিয়াল) আলাদা নিতে হবে। ঘোষিত হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল বা তথাকথিত মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন না। কোন কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তা যাচাই করুন।
হজ প্যাকেজ ও খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা
টাকা কমবেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে এজেন্সি বাছাই করবেন। বিশেষ করে বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে বা আজিজিয়ায় থাকা না থাকা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে। এজেন্সির লোক হজপালনে কতটা সহায়তা করবে, কোন কোন জায়গায় নিয়ে যাবে, সব কিছু জেনে নেবেন।
হজ প্যাকেজ কত দিন, সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, কোথায় কত দিন অবস্থান এবং তা কীভাবে, বিস্তারিত জানতে হবে। গত কয়েক বছর কত নম্বর মোয়াল্লেমের অধীন ওই এজেন্সি হজপালন করছে, তা জানতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশের জন্য ১ থেকে ১১৫টি মোয়াল্লেম রয়েছে। দাম অনুযায়ী জামারা (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) থেকে মিনার তাঁবুর দূরত্ব নির্ভর করে। এখানে বাংলাদেশি এজেন্সির তৎক্ষণাৎ করণীয় কিছু থাকে না, তবে অতিরিক্ত সেবা খরচ দিয়ে কিছু সেবা মিলে। এটা নিয়ে মিনায় বির্তক হয়। যদিও তখন হজের জন্য হাজি সাহেব এবং এজেন্সির মালিক সবাই এহরাম অবস্থায় থাকেন।
মক্কা-মদিনায় বাসার অবস্থান
মক্কায় বাসার ধরন ও তা কাবা শরিফ থেকে কত দূরে, বাসায় লিফট আছে কি না, বাসার প্রতি কক্ষে কতজন এবং বাথরুম কতজনের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে, জেনে নেবেন। একই কথা মদিনার বাসার জন্য প্রযোজ্য।
ফিতরা
ফিতরা বা স্থানান্তর (অর্থাৎ মক্কায় বাসা কাবা শরিফের কাছে-দূরে একাধিকবার বদল করাকে ফিতরা বলে) আছে কি না। হজের আগে না পরে ফিতরা হবে, তা জানতে হবে।
খাবার ও নাস্তা
সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি না বা বিকল্প ব্যবস্থা কী, তা জানতে হবে।
মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা
হজের সফরে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। চাইলে যখন-তখন যানবাহন পাওয়া যায় না। এটাও মাথায় রাখা। উমরায় তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, জামারায় পাথর মারা, মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজের তাওয়াফ, সাঈ করতে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। এসবের জন্য মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি। মিনা, আরাফায় খাবার, যাতায়াত, মক্কায় তাওয়াফ, সাঈ করতে যাওয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা এবং মোয়াল্লেম কী কী সুবিধা দেবেন, তা-ও বিস্তারিত জেনে নেবেন। আপনার সঙ্গী অসুস্থ বা দুর্বল হলে বিকল্প ব্যবস্থাও জেনে নিতে হবে।
হজের নিয়মকানুন জানা
প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক, হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন। হজসংক্রান্ত নিয়মকানুন জানুন। প্রয়োজনে যারা হজে গেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। বিভিন্ন জায় হজ প্রশিক্ষণ হয়, সেগুলোতে যোগ দিন।
রাস্তাঘাট সম্পর্কে ধারণা রাখা
সৌদি আরবের টিভি চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টা মসজিদে নববি ও কাবা শরিফে তাওয়াফ সম্প্রচার করে, সম্ভব হলে ওই সব চ্যানেল দেখলে আগে থেকে উমরা, তাওয়াফ ও মসজিদের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। এর বাইরে ছাপানো অথবা ইন্টারনেটে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাতের মানচিত্র পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মানচিত্র দেখুন, তাহলে ওখানকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।