স্টাফ রিপোর্টার: গত ১৭ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন ও স্বৈরশাসনামলে বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা, গ্রেফতার-কারাবন্দীর শিকার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান (হাজী মুজিব), শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজ উদ্দিন তাজুসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অবর্ণনীয় এসব নির্যাতনের শিকার হয়েও দীর্ঘ এই সময় ধরেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক-নির্দেশনায় ও শ্রীমঙ্গলে হাজী মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সামনের সারিতে থেকে বিএনপি নেতা নুরুল আলম সিদ্দিকী ও তাজ উদ্দিন তাজু লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের। শুধু বিএনপি করার কারণে ঘর-বাড়ী ছাড়া হয়েছেন অনেকে, হারিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। দল ত্যাগ করলেই অর্থ-সুন্দর জীবনের প্রলোভন থাকলেও তারা খেয়ে না খেয়ে রাত্রি যাপন করেছেন ক্ষেতে-খামারে। কিন্তু তারপরও দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি আনুগত্য ও আদর্শের প্রতি ছিলেন অবিচল। তাদের এই দুর্দমনীয় বিশ্বাস ও অঙ্গীকারের কারণে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার দেড় দশকে বিএনপি নেতা হাজী মুজিব,নুরুল আলম, তাজ উদ্দিন তাজুসহ অন্যান্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা, হামলা, জেল-জুলুম করলেও বিএনপি রাজনীতি ও রাজপথের আন্দোলন থেকে তাদের দমানো যায়নি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজ উদ্দিন তাজু বলেন, টানা ১৭ বছর ধরে আমার এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিব, উপজেলা সভাপতিসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের মাথার ওপর ঝুলছে লাখো মামলার খড়গ। ২০০৮ সাল থেকে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক শতাধিক মামলা হয়েছে। শুধু আমার বিরুদ্ধেই শতাধিক মিথ্যা, গায়েবী ও রাজনৈতিক মামলার আসামি করা হয়েছে।
একাধিকবার গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ, রিমান্ডের নামে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে যোগ দিয়ে শ্রীমঙ্গল থানার সাবেক ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ওসি কে এম নজরুল আমাকে মিছিল থেকে গ্রেফতার করে আহত অবস্থায় প্রথমে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে, পরে মৌলভীবাজার সর্বশেষ সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশ আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছে। আমরা রমজানে ইফতার মাহফিল করতে পারিনি। লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে ইফতার মাহফিলের মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলেছিল। বাড়িতে ঈদ করতে পারিনি। জেলে ঈদ করতে হয়েছে। নিরাপদে বাসায় ঘুমাতে পারিনি। ক্ষেত-জঙ্গলে ঘুমাতে হয়েছে। এখনও বহু মামলা মাথায় নিয়ে কোর্টে যেতে হচ্ছে। তবে অনেক মামলা-হামলা সয়েছি। তবে কারো সাথে আপস করিনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছিল সরকার, তা নজিরবিহীন। স্বাধীনতার পর বিরোধী মত ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমনের জন্য এমন উদাহরণ কেউ তৈরি করতে পারেনি।
দ্বিতীয় টঙ্গীপাড়াখ্যাত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের সাধারণ মানুষ যখন বিএনপিকে নিয়ে আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন বুনছেন, ঠিক তখনই ১৭ বছর আওমী লীগ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা বিএনপি নামধারী তথাকথিত গুটিকয়েক নেতারা স্বৈরাচারের দোসরদের ও আওয়ালী লীগকে পূর্নবাসন করে বিএনপির অর্জনকে ম্লান করতে নানাভাবে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
কাজেই বিএনপির নামে এসব আওয়ামী লীগের দালাল ও স্বৈরাচারের দোসরদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এবং তাজু ভাই ও হাজী মুজিব ভাইকে নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে আরও সতর্ক-সচেতন থাকার অনুরোধ করছি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিব, উপজেলা সেক্রেটারি তাজুসহ অনেক নেতাকর্মী বহু গায়েবী মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে জেলে ছিলাম। গত ১৭ বছর আমারা বাসা-বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। কোনো দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারিনি।আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশকে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ আমার ববাসার দরজা ভেঙ্গে দিয়েছিল। তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম, আছি, থাকবো, কারো সাথে আতাত করিনি করবো না।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফরে হজরত শাহজালাল রহ. মাজার জিয়ারতে যাওয়ার পথে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বাহুবলের মিরপুর এলাকায় সমবেতন হয়। খালেদা জিয়া মিরপুর পৌছলে তাকে শুভেচ্ছা জানান শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা শেষে শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোড শাহী ঈদগাহর সামনে থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) এর নেতৃত্বে মিছিল সহকারে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনায় অবস্থিত খান সু-স্টোর এর সামনে পৌঁছামাত্র তৎকালীন শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম নজরুল ইসলাম, এস আই রফিকুল ইসলাম ও এসআই জাকারিয়াসহ সঙ্গীয় ফোর্স, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজ উদ্দিন (তাজু)সহ মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।
এসময় হামলায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজ উদ্দিন (তাজু) এর পায়ে এবং হাতে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। এসময় শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত তাজ উদ্দিন তাজুকে প্রথমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরবর্তীতে জেল হাজতে থাকা অবস্থায় জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ওইদিন মিছিল থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজ উদ্দিন (তাজু), শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আজিদ উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক আইয়ুবুর রহমান এবং পৌর যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আব্দুল কাদিরকে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ আটক করে ‘পুলিশ এসল্ড’ নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৪ নেতাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
এদিকে আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানার সাবেক ওসি কেএম নজরুলসহ জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি তুলেছেন ভোক্তভুগী বিএনপি নেতা তাজ উদ্দিন তাজু।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপে বিএনপি তাজ উদ্দিন তাজু বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলকে দমন করতে মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। সে সময় কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। বিগত দিনে মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তাজ উদ্দিন তাজু বলেন, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে শ্রীমঙ্গল বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শতাধিক ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের করা হয়। এসব মামলার অধিকাংশেরই বাদী আওয়ামীলীগ এবং তাদের দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠ এবং পুলিশ। এসব হয়রানিমূলক মামলায় নেই কোনো ঘটনা কিংবা আলামত। মামলায় উল্লিখিত স্থানে ছিল না কোনো আসামির উপস্থিতি।
বিশেষ করে ২০১৮ সালে আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় হাজী মুজিবসহ আমাদের নেতাকর্মীদের উপর মিথ্যা মামলা এবং কঠোর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। সে সময় বহু সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলার আসামি ও নির্যাতন করা হয়। এদিকে ২০১৫ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিব গ্রেফতার হন এবং ২০১৮ ও পরবর্তী সময়ে উপজেলা বিএনপি নেতা তাজ উদ্দিন তাজুসহ অনেকেই গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন।
সাবেক ওসি কেএম নজরুল, এসআই রফিকুল ইসলাম ও জাকারিয়া কোনো মামলা ছাড়াই তাজ উদ্দিন তাজু ও বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেন বলে ভোক্তভুগীরা অভিযোগ তুলেছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন তাজু বলেন, বিএনপি, অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ভয়ানক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মামলা আর জেল জুলুমে প্রত্যেককে কষ্টের জীবন পার করতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সবাই যখন মুক্ত বাতাসে, তখন শুধু ব্যতিক্রম বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের কাঁধে এখনও মামলার বোঝা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, পুলিশের মামলা এবং হামলার শিকার হয়ে আমি গত ১৬টি বছর দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছি। সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিতর্কিত ভোটে নির্বাচিত সাবেক এমপি ভোট চোর আব্দুস শহীদের নির্দেশে ও তার প্ররোচনায় শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের কিছু অতিউৎসাহী দলকানা পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও হামলা করেছে। আমাদের দাবি এসব আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দ্রুত গ্রেফতার ও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে জবাবদিহি ও বিভাগীয় প্রসেডিংয়ের আওতায় আনা হোক।