নিউজ ডেস্ক: গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গান, ছোটগল্প, চিত্রকর্মসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য দ্যুতি ছড়িয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ (২৫ বৈশাখ) কবিগুরুর জন্ম জয়ন্তী। বরাবরের মতো এবারও রবি ঠাকুরের জন্মলগ্ন উপলক্ষে দেশজুড়ে বহু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৬ মে ঢাকায় গঠিত হয়েছে ‘টেগোর সোসাইটি’। যার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য, সংগীত আর দর্শনকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে বলে জানান এর সভাপতি ড. চঞ্চল খান।
এবার জাতীয়ভাবে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা : রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’। এই প্রতিপাদ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বর্ণিল সব আয়োজন থাকছে।
কবির স্মৃতি বিজড়িত খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে থাকছে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। সেখানে চলছে দুই দিনব্যাপী আয়োজন। গান, কবিতার আসর ছাড়াও থাকছে রবীন্দ্র মেলা।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বর্ণিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নৃত্য, আবৃত্তি, রবীন্দ্রসংগীতসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় কবিগুরুকে স্মরণ করা হবে।
এদিকে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায়ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
এদিকে চার দশক ধরে প্রতি বছরই ঘটা করে হয়ে আসছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে এত বড় উৎসব আর হয় না এই বাংলায়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীর বুকে বসতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী উৎসব। আয়োজনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা।
৯ থেকে ১১ মে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হবে এই উৎসব। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে অকাল প্রস্থানে যাওয়া সাদী মহম্মদ স্মরণে। কিংবদন্তি শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কলিম শরাফীর শততম জন্মবার্ষিকীও আজ ৮ মে। সেটি ৯ মে উৎসবের উদ্বোধনী দিনে পালন করবো ঘটা করে।
১৮৬১ সালের ৭ মে (২৫ বৈশাখ) পশ্চিমবঙ্গের জোড়াসাঁকোয় জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জমিদার পরিবারে জন্মের সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য-শিল্পের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। আর সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রতিভায় তিনি ছিলেন অনন্য। যার সুবাদে শুরু করেন সাহিত্যচর্চা। ১৮৭৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’।
পুরোটা জীবন লেখালেখিতে কাটিয়েছেন রবি ঠাকুর। ফলে তার সৃষ্টিকর্মের সংখ্যাও বিপুল। ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও ৯৫টি ছোটগল্প রচনা করেছেন তিনি। এর বাইরে তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এটাই শেষ নয়, চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার প্রতিভা ছিল অনন্য। জীবদ্দশায় প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন তিনি।
১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবি কিংবা সাহিত্যিকদের মধ্যে তার নামটি উচ্চারিত হয় প্রথমেই। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ রবীন্দ্রনাথের লেখা।
১৯০১ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন
১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। মৃত্যুর সাত দিন আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ) জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।