খেলা ডেস্ক: লক্ষ্যটা সহজের কাতারে থাকলেও টপ-অর্ডারদের আরও এক ব্যর্থতার দিনে লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচটা কঠিন করে তুলে বাংলাদেশ। তবে ইনিংস মাঝে লিটন-হৃদয়ের ৫৩ রানের জুটিতে সহজ জয়ের পথেই এগোচ্ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে ৩ উইকেটে ৯১ রান থেকে ১১৩ রানে পৌঁছাতেই নেই ৮ উইকেট। তবে শেষটায় এসে মান বাঁচালো অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার অপরাজিত ১৬ রানের ক্যামিওতে শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ।
তবে ম্যাচটা যেন একা হাতে শেষ করতে চেয়েছিলেন তাওহিদ হৃদয়। ১১ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে তখন ৭৩ রান। বলে এলেন হাসারাঙ্গা। তাকে তিন বলে তিনটি ছক্কা মেরে স্বাগত জানান হৃদয়। হয়তো আরও দু-একটা ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন। তবে পরের বলেই ফিরলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। পরের দলীয় ৯৯ রানের মাথায় আরেক সেট ব্যাটসম্যান লিটনকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন হাসারাঙ্গাই। তবে সেখান থেকে জয়ের দূরত্ব ছিল কেবল ২৬ রানের, হাতে বল ৩৫টি ও উইকেট ৫ টি। তবে ম্যাচ ১৮তম ওভারে যেতেই অষ্টম উইকেটটাও হারায় বাংলাদেশ।
শেষ দুই ওভারে দরকার ১১ রান। এরপর ১৯তম ওভার মোড় নেয় চরম নাটকীয়তায়। দাসুন শানাকার প্রথম বলে ছক্কা হাঁকালেন মাহমুদউল্লাহ, পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন তানজিম সাকিবকে। তৃতীয় বল ডটের পর চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাহমুদউল্লাহকে স্ট্রাইক দেন তানজিম। এরপর একটি ডট বল এবং ওয়াইড। পরে শেষ বলে ওভার থ্রো মিলিয়ে দুই রান নিয়ে এক ওভার বাকি থাকতেই লো স্কোরিং ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ২ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা শুরু টস দিয়েই। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে বোলিং সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সেখানে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের মামুলি পুঁজি পায় লঙ্কানরা।
লক্ষ্যটা সহজের কাতারে থাকলেও ইনিংসের প্রথম ওভারেই শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারে তুষারার বলে বোল্ড হয়ে একই পথে হাঁটেন তানজিদও (৩)। পরের লিটনকে নিয়ে শুরুর সেই চাপে সামলে উঠার ইঙ্গিত দেন অধিনায়ক শান্ত। তবে আরও একবার ব্যাট হাতে ছন্দহীন এই বাঁহাতি ব্যাটার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দলীয় ২৮ রানের মাথায় আসালাঙ্কার হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে পাড়ি জমান শান্ত। এর আগে ১৩ বলে করেন স্রেফ ৭ রান।
তবে চতুর্থ উইকেটে লিটন ও তাওহিদের জুটিতে চাপ অনেকটাই সামলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০ বলে পুরো ২০০ স্ট্রাইক রেটে হৃদয় ফিরলে ভাঙে তাদের ৫৩ রানের জুটি। পরের ৩৮ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন লিটনও। পরে সাকিব-রিশাদরা দ্রুত ফিরলে ফের চাপে পড়ে তারা। তবে শেষের সেই থ্রিলারে শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। সেখানে শ্রীলঙ্কার হয়ে তুষারা নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানরা তাসকিনের পেসে তৃতীয় ওভারে উইকেট হারালেও রানের গতি ধরে রেখেই এগোচ্ছিল। ৫ ওভারেই ১ উইকেটে ৪৮ রান তুলে ফেলেছিল তারা। সেখানে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে কামিন্দু মেন্ডিসকে ফেরানোর পর দলীয় ৭০ রানে ইনফর্ম পাতুম নিসাঙ্কাকেও ফেরান মুস্তাফিজ। তবে ফের চাপ সামলে লঙ্কানদের এগোতে গেলে ১৫তম ওভারের শুরু দুই বলে জোড়া আঘাত হানেন লেগ স্পিনার রিশাদ। সেই দুই উইকেটসহ শেষ ২৪ রানেই ৭ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
বাংলাদেশের হয়ে ১৭ রান খরচে তিন উইকেট মুস্তাফিজ। তবে ২২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া রিশাদে হাতেই যায় ম্যাচসেরার খেতাব। ১৫তম ওভারে রিশাদের সেই ঘূর্ণিতে ম্যাচ থেকে লঙ্কানদের ছিটকে পড়াটা শুরু হয়। এছাড়া তাসকিন নেন দুই উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
শ্রীলঙ্কা: ১২৪/৯ (২০ ওভার) (নিসাঙ্কা ৪৭, ডি সিলভা ২১; মুস্তাফিজ ৩/১৭, রিশাদ ৩/২২, তাসকিন ২/২৫)
বাংলাদেশ: ১২৫/৮ (১৯ ওভার) (হৃদয় ৪০, লিটন ৩৬; তুষারা ৪/১৮)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: রিশাদ হোসেন