সিলেট: সিলেটের হযরত শাহপরাণ (রাহ.) মাজার এলাকায় পাগলের বেশে একদল লোকের সঙ্গে আলেম-জনতার সংঘর্ষ হয়েছে।
সোমবার দিবাগত (৯ সেপ্টেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে মাজারের সিঁড়িতে বসে জিকির ও গজল চলাকালে এ হামলা চালায় পাগল বেশধারী লোকজন। হামলাকারীরা মাজারের খাদিমদের দান সদকা সংগ্রহের বৈঠকখানাসহ মাজার অফিসে ভাঙচুর চালায়। এ সময় মুসল্লি ও ছাত্রজনতা প্রতিরোধ গড়লে পাগলের বেশধারী হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এসময় হামলায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে, মাজার এলাকায় হামলার খবর পেয়ে সকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় এসএমপি কমিশনার দোষীদের শনাক্তকরণ আইনে আওতায় আনার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন থেকে শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস শুরু হয়। এর আগে ওরসকে কেন্দ্র করে গান-বাজনাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে তার জন্য গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন স্থানীয় তৌহিদী জনতা। এমনকি মাজার কর্তৃপক্ষ বৈঠকে ওরসের নামে কোনো অসামাজিকতা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং পরবর্তীতে ওরসে গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তাই ওরস চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সে জন্য আলেম সমাজের একটি প্রতিনিধি দল প্রথম দিন থেকেই মাজার এলাকায় অবস্থান করেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখেন। তারই ধারবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতেও তারা মাজারের মসজিদের সিঁড়িতে বসে জিকির ও গজল পরিবেশন করছিলেন। এসময় ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাঁধা পাগলবেশে লোক তাদের ওপর হামলা করে মারধর করতে শুরু করেন। হামলার শিকার আলেমরা এসময় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মসজিদে আশ্রয়কারীদের উদ্ধার করেন এবং পাগলবেশীদের ওপর চড়া হন। এসময় দু-পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ হয় ও উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তৌহিদী জনতা অভিযোগ করে বলেন, শুরুতে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও উত্তেজনা শুরু হওয়ামাত্র তারা সেখান থেকে চলে যায়। শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করেছে একটি তৃতীয় পক্ষ। তারা ওরসে আসা মাদকসেবী ও মাথায় লাল কাপড় বাঁধা কিছু লোককে পরিস্থিতি অশান্ত করতে উসকানি দিয়েছে। পরে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।
হযরত শাহপরাণ (রাহ.) মাজারের খাদিম সৈয়দ কাবুল আহমদ বলেন, গান-বাজনা না হওয়ার পক্ষের হুজুররা মাজারের সামনের সিঁড়িতে বসে জিকির আজগার করছিলেন। তৃতীয় একটি পক্ষ রাতে পাগলবেশধারীদের উসকানি দিয়ে তাদের ওপর ঢিল মারা হয়। মারার পর হুজুরদেরকে দ্রুত মসজিদের ভেতরে নিয়ে যাওয় হয়। পরে হুজুররা বিভিন্ন মাধ্যমে জানান যে তাদেরকে মাজারে পাগলরা বন্দি করে রেখে দিয়েছে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে তৌহদী প্রতিরোধ গড়লে পাগলের বেশধারী হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এরমধ্যে কিছু দুষ্কৃতিকারী লোকজন মাজারের মহিলা ইবাদতখানাসহ বিভিন্নস্থানে ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ৭০-৮০জনের মতো পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও উভয় পক্ষকে শান্ত করতে কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশেনের ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাজারে ওরসের নামে নাচ-গান-মদ-জুয়া, গাজা, অশ্লীলতা, নারী-নৃত্যসহ যাবতীয় অসামাজিক-অনৈতিক ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছিলাম। সবকিছু সুন্দর ছিল। কিন্তু সোমবার দিবাগত গভীর রাতে কয়েক শতাধিক পাগলবেশী লাল কাপড় পড়া লোক মিছিল শুরু করে। তখন আমি নিজেই ওই স্থানে গিয়ে মিছিলকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু একটি পক্ষ তাদেরকে ইন্ধন দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, পাগলবেশী লাল কাপড় পড়নে লোকজন বেশিরভাগ মাদকাসক্ত ছিলেন। তাদেরকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি ও রড দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণের ভাব দেখে মনে হয়েছে যারা গান-বাজনা ও অশ্লীলতা বন্ধের পক্ষে ছিলেন তাদেরকে মারার। মাজারের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য আমি উভয় পক্ষকে বলবো সবাই শান্ত থাকুন।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর নিয়ম অনুযায়ী ৪, ৫ ও ৬ রবিউল আউয়াল তিনদিন ব্যাপী ওরসের আয়োজন করে থাকে মাজার কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে প্রথম দিন খতমে কোরআন, দোয়া ও জিকির আজকার এবং মিলাদ মাহফিল। দ্বিতীয় দিন গিলাফ চড়ানো, গরু জবেহ, সারারাত জিকির আজকার ও মিলাদ মাহফিল এবং ভোর ৪ টায় ফাতেহা পাঠ। শেষ দিন বাদ ফজর আখেরি মোনাজাতের পর নেওয়াজ বিতরণ করা হয়।