স্টাফ রিপোর্টার: সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন মুঈদ আশিক চিশতী, একজন উদ্যমী ও পরিশ্রমী মানুষ। তিনি তার নিজ এলাকার কৃষি ও পশুপালন খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে গড়ে তুলেছেন একটি খামার। তার খামারটি এখন শুধু তার নিজ পরিবারকেই নয়, পুরো এলাকার মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিজ গ্রাম খোশালপুরে ২০০৭ সালে চিশতী এই সাফল্যের শুরু হয় ছোট পরিসরে। নিজের বাড়ির পাশেই গরু ও মুরগি পালন শুরু করেন। প্রথম দিকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হলেও তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য তাকে এগিয়ে নিতে থাকে। খামার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, সঠিক পরিকল্পনা এবং স্থানীয় কৃষি ও পশুপালন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে খামারকে বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করেন।
বর্তমানে তিনি মহিষ ও দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছেন। সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে খামার ও ৫০ বিঘা জমিতে গবাদিপশুর খাদ্য সাইলেজ উৎপাদন করছেন এবং ৪০ বিঘা জমিতে ৮টি পুকুরে মৎস চাষ করছেন।
চিশতীর খামারে দেশি গরুসহ বিভিন্ন জাতের গরু আছে যেমন: আরসিসি, মিরকাদিম, ফিজিয়ান ইত্যাদি। এখন প্রায় ২০ টিরও বেশি গরু রয়েছে। এবং দেশি মহিষসহ বিদেশি জাতের যেমন: মুররা, এলবিনো, নিলিরাভি মহিষ রয়েছে। এখন ২৪ টি মহিষ রয়েছে। ইতোপূর্বে উপমহাদেশের বিখ্যাত গরুর ব্রিড ‘রাঠি’ এর বাচ্চা হইছে। মহিশ এর মুররা, নিলিরাভি এর বাচ্চা জন্ম হয়েছে। সরকার ব্রিডিং পলিসি অনুসরন করে “ব্রিডিং পলিসি নিয়ে গরু ও মহিশ এর জাত উন্নয়ন এ মনোযোগ দিচ্ছেন তিনি। এছাড়াও খামারের আশেপাশের জমিতে ফসল উৎপাদন করে তিনি একধরনের ‘মিশ্র কৃষি’ চালু করেছেন, যা তার খামারের আয়কে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। তার খামার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য সাইলেজ ক্রয় করে থাকেন।
মুঈদ আশিক চিশতী, বলেন, “প্রথমে অনেকে আমার পরিকল্পনাকে অবিশ্বাস করেছিল, তবে আমি বিশ্বাস করেছি আমার স্বপ্নের ওপর। আজ আমার খামার শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবেও একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে।”
চিশতীর এই খামার শুধু তার নিজের আয় বৃদ্ধি করেনি, বরং এলাকার অনেক বেকার যুবককে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। খামারে কাজ করে তারাও স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তার খামারে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক দৈনিক মুজুরি ও মাসিক বেতন হিসেবে কাজ করছেন। চিশতীর খামারের দৃষ্টান্ত দেখে অন্যান্য গ্রামবাসীরাও একই পথে হাঁটার চেষ্টা করছেন, যা কমলগঞ্জের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে।
চিশতী জানান, খামার চালাতে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন ও খাদ্য সরবরাহে সমস্যা ছিল। সরকারিভাবে কোন ধরনের সহযোগীতা পান না বললেই চলে। তিনি বলেন, তার বাবা বিএনপি নেতা হওয়াতে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় সরকারিভাবে প্রানী সম্পদ বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাকে কোন ধরনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি আজ সফল। ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় পরিসরে তার খামারকে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছেন এবং স্থানীয়দের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করারও ইচ্ছা রয়েছে।
তিনি ইতোমধ্যে “কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে atiah deponkor University of science & technology দিয়ে “কৃষি উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২২” সম্মাননা পেয়েছেন। প্রাণী সম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ এ মৌলভিবাজার জেলাতে মহিশ উতপাদনে প্রথম হয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এ গুনগত খাবার উতপাদন রিলেটেড সেমিনার সহ বিভিন্ন ভার্সিটিতি বিভিন্ন সেমিনারে ডাক পেয়েছেন এবং উদ্যোক্তা ট্রেনিং দিতেও ডাক পেয়েছেন।
মুঈদ আশিক চিশতী কমলগঞ্জের একজন সত্যিকার উদাহরণ, যিনি প্রতিকূলতার মধ্যেও সাফল্যের মুখ দেখেছেন। তার খামার আজ অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা কমলগঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।