ভোটার আইডি কার্ড আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় না হলেও যে কোনো ধরনের সেবা গ্রহন করতে প্রয়োজনীয় হয়। অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড বা ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই সঠিক ভাবে অবগত নই।
যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে হাজারো ভিড়ের কারণে কষ্ট পেতে হয়। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানা থাকলে আপনি ঘরে বসে মোবাইল অথবা কম্পিউটার থেকে ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম এবং ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড সহ সকল কাজ গুলো সম্পন্ন করতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের অদ্যোপান্ত সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। নতুন ভোটার যারা হয়েছেন, অনেকেই আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারছেন না। তাই কিভাবে সহজেই ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করবেন সে সম্পর্কে রয়েছে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে।
ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে হলে সবার আগে জানতে হবে আপনার ভোটার আইডি কার্ড অনলাইনে ইতিমধ্যে রয়েছে কি না। ভোটার আইডি কার্ড অনলাইনে না থাকলে আপনি কোনো ভাবেই সেটার কোনো কপি ডাউনলোড করতে পারবেন না। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর ক্ষেত্রেও অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড থাকতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন থেকে খুব সহজেই চেক করতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার কতৃক নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম করা যাবে। সাধারণত ভুমি উন্নয়ন অফিস এর ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম করা হয়। এর জন্য আপনাদের ভুমি উন্নয়ন এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আপনাদের সুবিধার্থে সরাসরি ফর্মের সোর্স এখানে দিয়ে দিলাম। ভোটার আইডি চেক করার জন্য ভুমি উন্নয়ন ওয়েবসাইট এখানে চাপ দিন। এর পরে একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। সেখানে চাওয়া প্রতিটি ইনফরমেশন সঠিক ভাবে পূরন করতে হবে।
- * ফর্মের প্রথম বক্সে আপনার ভোটার আইডি কার্ডে ব্যবহৃত ফোন নাম্বার টি দিবেন। সেটা না থাকলে অন্য ফোন নাম্বার দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন নাম্বার টি যেন সচল থাকে।
- * দ্বিতীয় খালি বক্সে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ১৭ ডিজিটের সংখ্যা দিতে হবে। ভালো করে দেখে শুনে ভোটার আইডি কার্ড নাম্বারটি লিখবেন।
- * তৃতীয় বক্সে ভোটার আইডি কার্ডে দেয়া জন্মতারিখটি বসাতে হবে। খেয়াল রাখবেন যে তারিখ টি ভোটার আইডি কার্ডে রয়েছে সেটা যেন সঠিক ভাবে হয়।
ফর্ম পূরন এর কাজ শেষ। এর পরে “পরবর্তী পদক্ষেপ” অপশনে চেপে দিন। আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সকল তথ্য আপনাদের সামনে চলে আসবে। ভোটার আইডি কার্ডে দেয়া ছবিটি ও আপনার সামনে চলে আসবে।
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার নিয়ম
অনেকেই আছেন যারা এ বছর নতুন ভোটার হয়েছেন। আপনারা ও চাইলেই ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি খুব সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম অনুযায়ী আপনারা সঠিক উপায় অবলম্বন করে সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে হলে আপনাদের টোকেন নাম্বার টির প্রয়োজন হবে। নতুন যখন ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য হালনাগাদ করা হয়, তখন প্রত্যক্ষ একটি টোকেন ফর্ম দেয়া হয়। টোকেন ফর্মের পিছনে একটি কোড রয়েছে। নতুন ভোটার এর ক্ষেত্রে এই কোড নাম্বারটি দিয়ে আপনারা ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন।
এর পরে আপনাদের নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে যেতে এখানে চাপ দিন। এর পরে নিচের দেয়া ধাপ গুলো অনুযায়ী কাজ করুন।
১ম ধাপ- সোর্স এ প্রবেশ করার পরে আপনাদের সামনে একটি ফর্ম চলে আসবে। নির্ধারিত তথ্য সম্পন্ন করতে হবে প্রতিটি বক্সের। ক্রমানুসারে,
- * প্রথম বক্সের মধ্যে ভোটার আইডি কার্ড হালনাগাদ এর সময়ে টোকেন ফর্মে দেয়া পিছনের রেজিষ্টন নাম্বার টি বসাতে হবে।
- * জন্মতারিখ থেকে আপনার কোনো সার্টিফিকেট / জন্মনিবন্ধন এ দেয়া জন্ম তারিখটি সঠিক ভাবে দিতে হবে।
- * শেষ বক্সে একটি ক্যাপচা দেয়া আছে সেটাকে পূরন করতে হবে।
২য় ধাপ- এর পরে আপনাকে “সাবমিট” অপশনে চেপে দিতে হবে। সকল তথ্য যদি সঠিক ভাবে থাকে তাহলে আপমাদের সামনে নতুন একটি রেজিষ্টন ফর্ম খুলবে।
৩য় ধাপ- এখানের রেজিষ্ট্রেশন ফর্মে আপনাকে বর্তমান ঠিকানা সঠিক ভাবে দিতে হবে। ক্রমানুসারে নিচের মত করে দিতে হবে।
- * প্রথমে বক্সে ডিভিসন এর স্থানে আপনি যে বিভাগ এ বাস করেন সেটা সিলেক্ট বা নির্বাচন করতে হবে।
- * দ্বিতীয় বক্সে ডিস্ট্রিক্ট এর স্থানে আপনি যে জেলায় বাস করেন সেটা খুঁজে সিলেক্ট বা নির্বাচন করতে করতে হবে।
- * এরপরে আপনার উপজেলা দেখতে পারবেন, সেটা ম্যানু তালিকা থেকে সিলেক্ট করতে হবে।
৪র্থ ধাপ- উপরের বক্স গুলোতে আপনার বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ্য করতে হবে। নিচের তিনটি বক্সে আপনার স্থায়ী ঠিকানা উপরের বক্স গুলোর মত করে পূরন করতে হবে। এর পরে পরবর্তী অপশনে চাপ দিয়ে দিয়ে হবে।
৫ম ধাপ- এই ধাপে আপনার সচল একটি ফোন নাম্বার দিতে হবে। যে নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে। নাম্বার টি দিয়ে বার্তা পাঠান অপশনে চাপ মেরে দিন। আপনার নাম্বারে আসা ৪ সংখ্যার ভেরিফেকশন কোড দিয়ে সাবমিট করে দিন। ২০২২ এর নিতিমালা অনুযায়ী একটি এপ ডাউনলোড করতে হবে সেখানে ফেস ভেরিফাই সম্পন্ন করতে হবে। এপের সোর্স ওখানেই পেয়ে যাবেন।
৬ষ্ঠ ধাপ- সকল কিছু সঠিক ভাবে করতে পারলে এবার এ একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে। আপনার ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে হলে লগ ইন এর সময়ে এই পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন পড়বে। পাসওয়ার্ড দিয়ে সেট পাসওয়ার্ড অপশনে চাপ দিয়ে দিন।
রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ার কাজ আপাতাত শেষ। এবার আপনাকে ইউজার নাম অথবা আইডি নাম্বার টি দিয়ে লগ ইন করে নিতে হবে। লগ ইন করে আপনারা ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।
৭ম ধাপ- ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড এর জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের লগ ইন ফর্মে ঢুকতে হবে। সরাসরি যেতে চাইলে এখানে চাপ দিয়ে দিন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান স্তম্ভ কয়টি ও কেন করবেন
- * প্রথম বক্সে আইডি নাম্বার অথবা ইউজার নাম টি দিতে হবে।
- * এর পরে পুর্বের রেজিষ্ট্রেশন এর সময়ে দেয়া পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
- * নির্ধারিত ক্যাপচা সম্পন্ন করে লগ ইন অপশনে চাপ দিতে হবে।
লগ ইন করার পরে আপনারা নিচের মত করে আপনার ভোটার আইডি কার্ড দেখতে পাবেন। আপনি চাইলে এখান থেকে ডাউনলোড বা রিইস্যু সহ নানার কাজ করতে পারবেন।
হারানো ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
আমাদের মধ্যেই অনেকেই রয়েছেন যারা বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত কারনে ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে ফেলেছেন৷ হারানো ভোটার আইডি ডাউনলোড করার নিয়ম গুলো অনলাইনে খুজতেছেন। হারানো ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড কিভাবে করতে হয় এ বিষয় সম্পর্কে জানাবো এই ধাপে।
ভোটার আইডি কার্ড কোনো ভাবে হারিয়ে গেলে সেটা ডাউনলোড করতে হলে ভোটার আইডি কার্ড এর নাম্বার টি মুখস্থ থাকতে হবে অন্যথায় ডাউনলোড করতে পারবেন না কোনাভাবেই। যদি, অনলাইনে আগে থেকেই রেজিষ্ট্রেশন করা থাকে তাহলে মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড বের করে নিতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড যদি কোনো অবস্থায় হারিয়ে ফেলেন তাহলে পুর্বের রেজিষ্ট্রেশন কৃত তথ্য দিয়ে লগিন করার মাধ্যমে ডাউনলোড করতে পারবেন। যদি আগে থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে তাহলে উপজেলা / ইউনিয়ন পরিষদ এর সহায়তা নিতে হবে।
নতুন আইডি কার্ড কিভাবে দেখব
ভোটার আইডি কার্ড ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে হাতে পাওয়া গেলেও অনলাইনে সাধারণ ভাবেই সেটা খুজে পাওয়া যায় না। অনলাইনে শুধুমাত্র রেজিষ্টনকৃত ভোটার আইডি কার্ড গুলোর তথ্য ডাউনলোড করা যায় ও সংশোধন এর কাজ করা যায়৷
আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সকল তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে থাকেন তাহলে তারা আপনাকে একটি টোকেন ফর্ম প্রদান করে দিবে। এই টোকেন ফর্ম টির মাধ্যমে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার টি বের করে নিতে পারবেন। এর পরে রেজিষ্টন করে সেখানে লগ ইন করে আপনার নতুন আইডি কার্ড দেখে নিতে পারবেন।
রেজিষ্টন ও লগিন এর প্রসেস গুলো ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড এর ধাপ গুলোতে স্টেপ বাই স্টেপ আপনাদের ধারণা দিয়েছি। প্রতিটি ধাপে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারলে খুব সহজেই নতুন ভোটার আইডি কার্ড দেখে নিতে পারবেন।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড দেখা অনেক বেশী সহজ। এর জন্য যে আইডি কার্ডের তথ্য দেখবেন সে আইডি কার্ডের নাম্বার ও জন্মতারিখ এর প্রয়োজন হবে৷ এ সকল বিষয় গুলো যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে ২ টি উপায় এর মাধ্যমে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড দেখতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ও ভুমি উন্নয়ন এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই দেখা যাবে। ভোটার আইডি অনলাইনে দেখার জন্য এখানে চাপ দিন। এর পরে ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার, ফোন নাম্বার, জন্মতারিখ দিয়ে সাবমিট করলে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে দেখে নিতে পারবেন।
অথবা আপনি চাইলে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে উপরের দেয়া নিয়ম গুলো অনুযায়ী কাজ করে সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড দেখে নিতে পারবেন। নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস আপনার হাতে থাকলে যে কোনো ভাবেই আপনি সকল তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।
শেষকথাঃ
বন্ধুরা ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে আজকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। যেহেতু এই কার্ডটি আমাদের দেশের নাগরিকত্ব এবং বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই আমরা সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড দেখার নিয়ম টা বেশি ভালো করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এই পয়েন্টগুলোর মধ্যে যদি কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন আর যদি ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে অন্য কোন পয়েন্ট নিয়ে জানতে চান সেটাও আমাদের কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন।