তোফায়েল পাপ্পু: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের মামলা, হামলা এবং হয়রানির শিকার হয়ে মাঠে সক্রিয় হতে না পারা বিএনপি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে মিটিং-মিছিল করে দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বিএনপির পুনরুত্থান দেখা গেছে। শ্রীমঙ্গলও এর ব্যতিক্রম নয়। নেতাকর্মীরা দলকে সুসংগঠিত করতে মাঠে কাজ করছেন। কেউ নতুন কমিটিতে আসার জন্য লবিং করছেন, আবার কেউ কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলের জন্য কাজ করছেন।
বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা স্থানীয় পর্যায়ে মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের কার্যক্রম আরও তীব্র হচ্ছে। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা দলের সংগঠনকে মজবুত করার পাশাপাশি জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, শ্রীমঙ্গলে আওয়ামী লীগের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই দৃশ্যপটে নেই। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদসহ দলের নেতাদের নামে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশি অভিযানের ফলে আব্দুস শহীদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ আলীসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন।
গ্রেফতার আতঙ্কে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের অনেকে শহরে আসার সাহস পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল, সেগুলো কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের নেতাকর্মীরাও আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছে। তাদের মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠে অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এতে শ্রীমঙ্গলে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ছে। এদিকে জাতীয় পার্টি মাঠে নেই বললেই চলে।
শ্রীমঙ্গলের সাধারণ জনগণ এই রাজনৈতিক পালাবদলকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। কেউ মনে করছেন, বিএনপির সক্রিয়তা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে, আবার কেউ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং অনুপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত। স্থানীয় রাজনৈতিক ভারসাম্যের অভাব শ্রীমঙ্গলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা কঠিন।
শ্রীমঙ্গলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিএনপি এবং জামায়াতের সক্রিয়তা এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করছে। আগামী নির্বাচন শ্রীমঙ্গলের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই অস্থিরতার মাঝেও জনগণের প্রত্যাশা, রাজনীতির এই পালাবদল শ্রীমঙ্গলের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।