মো. আল-আমিন, শ্রীমঙ্গল: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামে বড়ছড়া থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত এ কার্যক্রমে এলাকার কৃষি জমি, সুইসগেট, এবং চা বাগানের টিলা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অব্যাহত রয়েছে বালু উত্তোলনের এ তাণ্ডব।
২০০৬-০৭ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে সাতটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার কৃষকের সেচের পানির চাহিদা মেটাতে বড়ছড়ায় একটি সুইসগেট নির্মাণ করা হয়। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অবকাঠামো কৃষকদের জীবন-জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু, বালু উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যেই সুইসগেটের পেছনের অংশ প্রায় ২০ ফুট নিচের দিকে দেবে গেছে। ফলে এলাকাবাসীর মাঝে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কৃষক মো. শফিক মিয়া বলেন, “বড়ছড়া সুইসগেট আমাদের সাতটি গ্রামের প্রাণ। এটি ভেঙে গেলে হাজার হাজার হেক্টর জমি চাষের অযোগ্য হয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের এলাকা রক্ষা করুন।”
দিনারপুর চা বাগানের একটি টিলা ইতোমধ্যে ছড়ায় নিমজ্জিত হয়েছে। বালু উত্তোলন ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ট্রাক ও ট্রাক্টরের কারণে চা বাগানের সড়ক এবং গ্রাম্য অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনারপুর চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক জানান, “বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। বাগানের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা ছড়ায় চলে গেছে। সুইসগেটটিও ধ্বংস হতে বসেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বালু উত্তোলনের মূল পরিকল্পনাকারী মির্জাপুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়া। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনসহ একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও তিনি দাপটের সঙ্গে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষক ইসহাক মিয়া বলেন, “বালু তুলতে তুলতে আমাদের ঘরবাড়ি পর্যন্ত ধ্বংসের পথে। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শেখ সবুজ আলম বলেন, “২০১৭ সাল থেকে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করে আসছি। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের কারণে কোনো কাজ হয়নি।”
স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করলে ছড়া থেকে বালু উত্তোলনে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু এই নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “বালুর লিজ খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়। আমরা রিটের কপি পেয়েছি এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রভাবে এলাকাবাসী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি। স্থানীয় মেম্বার মো. লুৎফুর রহমান বলেন, “অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সুইসগেট ভেঙে যেতে পারে। এতে ২০-২৫ হাজার কৃষকের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে এবং গ্রাম্য সড়কগুলোতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে তাদের কৃষি ও পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।