নিউজ ডেস্ক: সুনামগঞ্জ জেলার সবকয়টি নদী পাহাড়ি ঢলের পানিতে টুইটম্বুর হয়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। কিন্ত হাওরের চিত্র ভিন্ন। অনেক হাওরে নেই পানি। মছের বিচরণ ক্ষেত্র হাওরের এই অবস্থায় শঙ্কিত হাওরপাড়ের মানুষ। উৎকণ্ঠায় মৎস্য বিভাগের দায়িত্বশীলরাও।
জেলার বৃহৎ তাহিরপুরের মাটিয়ান ও শনির হাওরে এখনো (সোমবার পর্যন্ত) বর্ষার রূপ দেখা যায় নি। এসব হাওরে নৌকা চলাচল শুরু হয় নি এখনো। মাটিয়ান হাওর দিয়ে যাওয়া সাবমারসিবল সড়ক দিয়ে রবিবারও যানবাহন চলাচল করছে। বৌলাই নদীর তাহিরপুর বাজারের উল্টো দিকে মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয়েছে। এতে মাটিয়ান হাওরে পানি প্রবেশ করছে না। শনির হাওরের ফসলি জমিতে রবিবারও ধানের নিচের অংশ (স্থানীয়রা ডেঙ্গা বলেন) দেখা গেছে। একদিকে ফুলে আছে নদীর পানি, অন্যদিকে হাওর প্রায় খালি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানালেন, সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলার ১০০ মিটার ডুবন্ত সড়ক অংশ দিয়ে পাহাড়ি ঢল ঢোকায় শনির হাওরের বীরনগর বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে। আশা করা যাচ্ছে দুই দিনের মধ্যে শনির হাওরে বর্ষার রূপ দেখা যাবে।
তাহিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মনে করেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কোন কোন অংশ নৌ চলাচলের জন্য কেটে দিতে হবে। না হয় ১০ কিলোমিটারের নৌপথ ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। তাহিরপুর থেকে মধ্যনগর যেতে বহুপথ ঘুরে সোমবারও যেতে হয়েছে। অথচ বাঁধের কিছু অংশ কেটে দিলে অর্ধেকেরও কম সময়ে তাহিরপুর থেকে মধ্যনগর যাওয়া সম্ভব।
মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, পানি যে বছর বিলম্বে এসেছে, হাওরে মাছের উৎপাদনও ওই বছরেই কমেছে। গেল পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ ও ২০২৩ সালে একমাসেরও বেশি বিলম্বে এসেছিল পানি। তুলনামুলকভাবে ওই দুই বছরেই পানি কমও হয়েছিল। এ কারণে জেলায় ২০২১ সালে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৩৫ হাজার টন, একই কারণে ২০২৩ সালেও সবচেয়ে কম ৩৪ হাজার টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২২ সালে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে জেলার সবকয়টি হাওর পানিতে ভেসে যাওয়ায় পাঁচ বছরের মধ্যে ওই বছরেই সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার টন মাছের উৎপাদন হয়েছিল। এবারও নির্ধারিত সময়ের একমাসের বেশি সময় পার হলেও হাওরের জলজ প্রাণী বিচরণেরই সুযোগ পাচ্ছে না। প্রজননের জন্যও পানি পাচ্ছে না মাছ। এ কারণে মাছ কমে যাবার আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন, জামালগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল হাসান। তিনি বললেন, হাওরে পর্যাপ্ত পানি না আসায় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানির ¯্রােতে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন হয়। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পানি না আসায় মাছের প্রজনন কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। একারণে হাওরে মাছের অভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও পানির সঙ্গে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনটি উপাদান মিলেই মাছের বংশবৃদ্ধি হয়। তাছাড়া ব্যাঙ, কুইচ্ছা, বিষহীন সাপ, কচ্ছপ জাতীয় প্রাণীর জন্য সময়মত পানি প্রয়োজন ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামছুল আলম বললেন, বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে হাওরে পানি ঢুকলে মাছের প্রজননের জন্য ভালো হয়। তাতে ধানও নিরাপদে ঘরে ওঠে, মাছের জন্যও ভালো হয়। পানি বিলম্বে আসলে মাছের উৎপাদন কমে যায়। তিনি জানান, গেল পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে তারা দেখেছেন, ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। ২০২০ সালে ৩৬ হাজার, ২০২১ সালে ৩৫ হাজার, ২০২২ সালে ৩৮ হাজার এবং ২০২৩ সালে ৩৪ হাজার টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ পানি সময়মত হলেই মাছের উৎপাদন বেশি হয়।
পানি আসতে বিলম্ব হওয়ায় হাওরে পানি ঢুকাতেও সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বললেন, ১৩৭ টি হাওরের মধ্যে বড় ৪৮ হাওরের বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ করেন তারা। এগুলোর ২৫টির বাঁধ কেটে রাখা হয়েছে। অন্যগুলোও রেগুলেটর খুলে দেওয়া হয়েছে। শনি. মাটিয়ান, মহালিয়া ও গুরমার হাওরে পানি ঢুকা শুরু হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে হাওরের প্রতিটি জনপদে নৌকা চলবে বলে জানান তিনি।