অনলাইন ডেস্ক: নিউইয়র্কের সব গলিপথ জনস্রোতে মিশে গিয়েছিল নাসাউ কাউন্টিতে। সবুজ চত্বরের স্টেডিয়ামের গ্যালারি সেজেছিল লাল-সবুজে। বিশ্বকাপ ভেন্যুতে চিত্রায়িত হয়েছিল বাংলার মুখ। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের সমর্থক বিজয় দেখতে এসেছিলেন। নাজমুল হোসেন শান্তরা প্রবাসীদের খুশি উপহার দিতে পারেননি। নাসাউ স্টেডিয়ামের ড্রপ ইন পিচের লো স্কোরিং ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেছে ৪ রানে। জিততে ১১ রান করতে হতো শেষ ওভারে। আশার ভেলা ভাসিয়ে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম বলে মাহমুদউল্লাহ উড়িয়ে মেরেছিলেন লং অন দিয়ে। সীমানার দিকে যেতে দেখে সবাই উল্লসিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বল সীমানার ওপর মার্করামের হাতে ধরা পড়ে। এতে নিভে যায় জয়ের শেষ প্রদীপ।
নাসাউ স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে সমালোচনা হলেও মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ নিউইয়র্কের নতুন ভেন্যুতে খেলা হচ্ছে ড্রপ ইন পিচে। যেখানে খাবি খেতে হচ্ছে মারকুটে ব্যাটারদেরও। আইপিএলে রান বৃষ্টি দেখা দর্শকদের বিশ্বকাপ উপহার দিচ্ছে লো স্কোরিং ম্যাচ। তাই তো ১১৯ রান করে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় ভারত। ‘কিলার’ মিলারকেও বশীকরণ করে রেখেছে স্লো পিচ। বাংলাদেশের চেনা বোলিংয়ের বিপক্ষেও হাত খোলা হয়নি তাঁর। পিচের বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাটারদের খেলা টি২০ শাসন করছেন বোলাররা। চার-ছক্কার বিনোদন ভুলে অলস ব্যাটিং দেখতে হচ্ছে সমর্থকদের।
গতকাল ‘ডি’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন এক সুতায় বাঁধা। পেস-স্পিন মিলে জমাট বোলিং হয়েছে ২০ ওভার। পাওয়ার প্লেতে ২৫ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার টাইগার বাহিনীর। তানজিম সাকিবের আগুনঝরা বোলিং ছিল মুগ্ধ করা। দেখে মনে হয়েছে নিশানা ভেদে সিদ্ধহস্ত তিনি। ওপেনিং ওভারে ব্রেকথ্রু, রিজা হেনড্রিকসকে রানের খাতা খুলতে দেননি। ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লিউ প্রোটিয়া ওপেনার। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় উইকেটের পতন ১৯ রানে। কুইন্টন ডি কক বোল্ড আউট তানজিম সাকিবের বলে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে এইডেন মার্করাম বোল্ড আউট হওয়ায় গর্জে ওঠে স্টেডিয়াম। লং আইল্যান্ডের সমুদ্রের গর্জন তোলা ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে গগনবিদারী চিৎকার। তানজিম সাকিব সেখানে বাড়তি আনন্দ যোগ করেন ত্রিসতান স্টাবসকে আউট করে। পাওয়ার প্লে শেষ হয় চার উইকেটে ২৫ রানে। শুরুর ঝলক দেখে মনে করা হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের ছবি দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে।
৬০ থেকে ৭০ রানে অলআউট হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু হেনড্রিকস ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার জুটি গড়ে প্রতিরোধের দেয়াল তোলেন। ৪৩ বলে ৪৬ রানের জুটি দু’জনের। লিটন কুমার দাসের হাতে ১৩ রানে জীবন পাওয়া মিলার শেষ করেন ২৯ রানে। এই রান করতেও ৩৮ বল লেগেছে মারকুটে মিলারের। ২৩ রানে চার উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা পঞ্চম উইকেট জুটির কল্যাণে ১০২ রানে পৌঁছায়। ৪৪ বলে ৪৬ রান করা হেনড্রিকসকে বোল্ড করেন তাসকিন। প্রথম স্পেলে রান দিলেও দ্বিতীয় স্পেলে তীব্রভাবে ফিরে আসেন লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। তিনিই পেয়েছেন মিলারের উইকেট। ১১৩ রানে ইনিংস শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে শুরু করে। মার্কো ইয়ানসেনের ওভার থেকে নেয় এক রান। পরের ওভারে কাগিসো রাবাদার দুই বলে পর পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শেষ বলে উইকেট হারান তানজিদ তামিম। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ২৯। প্রথম ছয় ওভারে তিন পেসারের দাপট সামলাতে পারলেও বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজকে প্রথম বলেই উইকেট দেন লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে ৩৬ রান করা উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন মেলবন্ধন করতে না পেরে। ছায়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ব্যর্থ। টানা দুই ম্যাচে রান পাননি। গতকাল তো বোলিংও করেছেন এক ওভার। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের অবদান স্টাবসের ক্যাচ নিয়ে তানজিম সাকিবের উইকেট প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করা। রানের খরা কাটাতে পারেননি অধিনায়ক শান্ত। ২৩ বলে ১৪ রানে টেস্ট ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তাওহিদ হৃদয় একা হাতে বহু পথ নিয়ে গেলেও পথ হারাল শেষে।